মোস্তাফিজুর রাহমানের তিনটি কবিতা


 

মহাকালের গান

একটা ভাঙা জানালা পার হয়ে এসেছি আমি–

নগ্নকাঁচে আমার শিরা-উপশিরা কেটে গেছে সেদিন। 

একটা অমাবস্যা রাত গভীর হলে–

আমি এসেছিলাম।


জগতবৃক্ষকূলে দেবকীকন্যা নেঁচেছিল সেদিন।

সেদিন রাজার ভয়াল মুখ দেখেছিলে তুমি?

কালিন্দীকূলে, মহাগঙ্গা পার হয়ে মহারাত্রিকালে

অসুরবিনাসে দেখা হয় মহাকালে, কালে কালে।


অবক্ষয়ের মধ্যে নিজ হাত দুটি তুলে

স্বধামেতে কেন চাও বিরহবাসর ? 

মথুরা শূন্য হলে, বৃন্দাবন শূন্য হলে 

রাঁধাসনে হবে কৃষ্ণবাসর। 

কালে কালে, মহাকালে, মহারাত্রিকালে।



পূব থেকে পশ্চিমে ছুটে চলা ঘোড়া 

সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে একটা ফাঁকা ট্রেনে উঠলাম।

সন্ধ্যার কুয়াশা নেমেছে স্টেশনটাতে।

ট্রেন চলতে শুরু করলো গাজীপুরের বনের ভেতর। 

অদ্ভুত এক বন আছে এখানে, 

এখানে গেলে মানুষের আর অবসাদ থাকে না কিছু। 

পিছু পিছু আসে বাড়ির কথা, প্রেমিকার যন্ত্রণা। 


পকেটটা ট্রেনের মতোন ফাঁকা, টিকিট নেই কাছে।

সবুজ গাছ তার ধূসর কুয়াশায় মিশে ছাইবর্ণ হয়ে আছে। 

এদিকে পকেটে তিনটে গোল্ডলিফ ছাড়া আর কিছু নেই। 


ফোনটা অফ করে ফেলে দিলাম জলে,

নিচে যমুনার  জল, মুহূর্মুহূ ছুটছে পূব থেকে পশ্চিমে।

অবসাদের কিছু নেই আর। 

সিগারেটের ধোঁয়ায় কুয়াশা যাচ্ছে মিশে 

আমিও তো ধোঁয়ায় মিলাবো– এ পথের শেষে।



বর্ষা এলে আবার ভিজে যাবে এই মাঠ 

আমাদের ক্ষেতের ধান পেঁকেছে আজ।

মধুফুলের গন্ধ সেখানে। 

এখানে পেঁচারা খেলা করে রাতে।

ধান কাটা শেষ হলে বিস্তীর্ণ ফাঁকা জমি পড়ে থাকে।

সেখানে আমাদের শিশুরা ছড়াবে তাদের জামার বোতাম।


এই মাঠ দিয়ে হেঁটে চলে যাবো আমরা পাঁকাসড়কে।

নতুন পিচের গন্ধ জানান দিবে উন্নতপৃথিবীর।

সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসতে হবে, নয়তো ঘুটঘুটে অন্ধকার এ পথ। 


শীত আসার আগে শেয়ালের ডাক শুনা যায় নামার ধার থেকে। 

সেলোমেশিনের মুখটা এখন পলিথিন দিয়ে বন্ধ করে রেখেছে কেউ।

এসব ভাবাভাবি করে আর কতদিন! 

বর্ষা এলে আবার ভিজে যাবে এই মাঠ।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ