রাখো তোমার উদ্যত পা
তুমি একটু থামো, তোমার দু’ পায় আমি নূপুর পরাই
তুমি থামো, এক পা তুলে রাখো আমার হাতের উপর
রেখার উপর, তালুর উপর, রাখো তোমার উদ্যত পা
ছুটন্ত এক নবীন ঘোড়া হঠাৎ যেমন থমকে দাঁড়ায়
তেমনভাবে চোখের উপর, চিত্রকরের মাথার উপর
আকাশ জুড়ে থমকে দাঁড়াও স্থির যেন হিম পাথর তুমি
এক এক রেখায় তোমায় ফোটাই, ফাটাই তোমার দাপট নখে
চোখ দুটোতে কাজল ঢেলে, করমচা ফল করবো গুঁড়ো
উড়াল দু’ পথ—আমার মায়ার দণ্ড ছুটবে পাহাড় চূড়োয় |
তুমি একটু থামো, দাঁড়াও, যেভাবে কাল দাঁড়িয়ে পড়ে
যেন শকট, সামনে বাধা নদী কিংবা সমদ্দুরের
যেন বিপুল বাঘের মাথা তাঁদরিখেকো আলোক গিলে
জবুস্থবু, তেমনি দাঁড়াও, রাখো তোমার প্রতিশ্রুতি –
তুমি থামো, রাখো আমার হাতের উপর প্রতিশ্রুতি
রেখার উপর, তালুর উপর, রাখো তোমার উদ্যত পা |
রহস্যের চাবি
রহস্যের চাবিখানি দাও,
তুলে রাখি |
হারিয়ে যায় না যেন ঝর্ণার জঙ্গলে—
রহস্যের চাবি দিয়ে পদ্যের দরোজা
খুলতে হবে |
যে-মানুষ রহস্য বোঝে না—
তার কাছে এ-পৃথিবী,
শুকনো বাদাম-খোসা যেন !
সুতরাং চাবি দাও,
আমি তাকে সাবধানে রাখি |
যেতে যেতে
যেতে-যেতে এক-একবার পিছন ফিরে তাকাই, আর তখনই চাবুক
আকাশে চিড়, ক্ষেত-ফাটা-হাহা-রেখা
তার কাছে ছেলেমানুষ !
ঠাট্টা-বট্ কেরা নয় হে
যাবেই যদি ঘন-ঘন পিছন ফিরে তাকানো কেন ?
সব দিকেই যাওয়া চলে
অন্তত যেদিকে গাঁ-গেরাম-গেরস্থালি
পানাপুকুর, শ্যাওলা-দাম, হরিণমারির চর—
সব দিকেই যাওয়া চলে
শুধু যেতে যেতে পিছন ফিরে তাকানো যাবে না
তাকালেই চাবুক
আকাশে চিড়, ক্ষেত-ফাটা হাহা-রেখা
তার কাছে ছেলেমানুষ !
ঠাট্টা-বট্ কেরা নয় হে
যাবেই যদি ঘন-ঘন পিছন ফিরে তাকানো কেন ?
যাত্রী তুমি, পথে-বিপথে সবেতেই তোমার টান থাকবে
এই তো চাই, বিচার-বিশ্লেষণ তোমার নয়
তোমার নয় কূট-কচাল, টানাপোড়েন, সর্বজনীন মৌতাত, রাধেশ্যাম
যাত্রী তুমি, পথে-বিপথে সবেতেই তোমার টান থাকবে
এই তো চাই—
যেতে-যেতে এক-একবার পিছন ফিরে তাকাই, আর তখনই চাবুক
তখনই ছেড়ে যাওয়া সব
আগুন লাগলে পোশাক যেভাবে ছাড়ে
তেমনভাবে ছেড়ে যাওয়া সব
হয়তো তুমি কোনদিন আর ফিরে আসবে না—শুধু যাওয়া
যাত্রী তুমি, পথে-বিপথে সবেতেই তোমার টান থাকবে
এই তো চাই, বিচার-বিশ্লেষণ তোমার নয়
তোমার নয় কূট-কচাল, টানাপোড়েন, সর্বজনীন মৌতাত, রাধেশ্যাম
যাত্রী তুমি— পথে-বিপথে সবেতেই তোমার টান থাকবে
এই তো চাই ||
মন্দিরে, ঐ নীল চূড়া
মন্দিরে ঐ নীল চূড়াটির অল্প নিচে তিনি থাকেন
একমুঠি আতপের জন্যে ভিক্ষাপাত্র বাড়িয়ে রাখেন
দিন-ভিখারি
অদূরে দেবদারুর সারি
ঘন ছায়ার গুহার দ্বারায় আকাশ ঢাকেন
মন্দিরে, ঐ নীল চূড়াটির অল্প নিচে তিনি থাকেন |
যার যা কিছু
সস্তা, মোটা, উচ্চতাময় কিংবা নিচু
বিঘত্খানেক দীর্ঘ এমন ডাল থেকে তাঁর
এই উপহার সংগৃহীত তুচ্ছ জবার |
সামান্য হয়
তাঁর পূজাতে নষ্ট সময়
. এবং তিনি
আমার চেয়ে ভালোবাসেন তরঙ্গিণীর
দু-হাত ফাঁকা, রক্তে মাখা ওষ্ঠ, করুণ—
চায় না ক্ষমা তরঙ্গিণী পাপের দরুন !
বছর-বিয়োনী মেঘ বৃষ্টি দেয়, বজ্রপাত দেয়—
ডোবা-র রহস্য বাড়ে, পদ্মপাতা দিঘিতে তছনছ |
শিকড়, কেঁচোর মতো, জীবনের অনুগ্রহ পায়,
পায় না মাথায় ছাতা, এক হাতা ভাতের মানুষও !
মানুষ বারুদ খুবই ভালোবাসে, ধূপগন্ধ যেন
আকাশপিদিম গেঁথে মন্ত্রী যায় সানাই বাজাতে,
পুলিস-মেথর যায় ঝাঁটা হাতে জানাতে বিদায়—
দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়ালই, লাগে ভালো |
সমস্যার সমাধান পায় ভূয়োদর্শী রাজবাড়ি—
অত্যন্ত সহজে, শুধু মানুষ পাথর নয় ব’লে
পরিত্রাণ পেয়ে যায় | অথচ পাথরে যদি মারো,
ঘা দাও, অমনি বগা ফোঁস করে, ঐতিহ্যমণ্ডিত
দেশের পাথর যদি ছেদ্ রে যায়, বিদেশ কী কবে !
ছাত নেই, ভাত নেই— কোন্ কাম পাথরে, মচ্ছবে—
তোমাদের ?
বয়ঃসন্ধি
বয়ঃসন্ধি, কাপড় ছিঁড়ত ভোরবেলাতেই—
এ তো এমন বয়ঃসন্ধি, কাপড় ছিঁড়ত ভোরবেলাতেই !
না যদি সে পোহাত রাত, দু’হাতে তার আগলে ব’সে
আল্ সে বা ছাদ যেখানে থাক্, দু’হাতে এক নখের জব্দ
ক’রে মারতাম আধকপালে, কুমারী সেই ভোরবেলাতেই—
তখন ? সে তো বয়ঃসন্ধি, দু’হাতে দুই কঠোর মিনার
ভাঙতে-ভাঙতে, শায়া-সেমিজ টুকরো হতো দশ নখরে |
আসলে এক বয়ঃসন্ধি, থাকত বলে তাকে মানায়,
এই উড়ন্তচণ্ডিপর্ণা, আসলে সেই বয়ঃসন্ধি !
ফিরে এসো মালবিকা
মালবিকা অইখানে যেওনাকো তুমি,
কথা কয়োনাকো অই যুবকের সাথে,
কী কথা তাহার সাথে? তার সাথে?
মালবিকা জানো তুমি ঘাসে কি লবণ ?
সামনে দেওদার বন, আমি বসে আছি |
ফিরে এসো মালবিকা কী সুস্বাদ এখানে, জীবনে—
ফিরে এসো মালবিকা যুবকের সাথে তুমি যেওনাকো আর,
শান্তিনিকেতনে আমি দেখেছি পলাশ—
ফিরে এসো মালবিকা,
ও-পলাশে তোমাকে সাজাবো ;
রাঙা ধুলো দিয়ে আমি তোমাকে সাজাবো ;
ভালোবাসা দিয়ে আমি তোমাকে সাজাবো |
ফিরে এসো মালবিকা,
যুবকের সাথে তুমি যেওনাকো আর |
এখানে মন্দিরে-মেঘে আশ্চর্য ঝংকার—
ফিরে এসো মালবিকা, ইচ্ছে করো, এখনই এসো !
পাতাল থেকে ডাকছি
পাতাল থেকে ডাকছি, তুমি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো ?
পাতাল থেকে ডাকছি, তুমি আমার ডাক শুনতে পাচ্ছো ?
এখন এসো, তোমার অমন আকাশ থেকে মাটির নিচে
এসে দাঁড়াও, আমার কাছে, আমার আঁচে পোড়াও দু পা
দু হাত পোড়াও, নরম ননীর মতন শরীর পুড়িয়ে কালো
কলুষ করো, আমার ধরো… পাতাল বড়ো কষ্ট দিচ্ছে
চূড়ার থেকে শিকড় ধরে নামো আমার মুখের উপর
বুকের উপর, সুখের উপর, দুঃখভরা নখের উপর
যেন মাটির উপর থেকে আঁচড়ে মাটি নখ নিয়েছে
পাতাল থেকে ডাকছি, তুমি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো ?
পাতাল থেকে ডাকছি, তুমি আমার ডাক শুনতে পাচ্ছো ?
এখন এসো, তোমার একার আকাশ থেকে মাটির নিচে
এসে দাঁড়াও আমার কাছে, পাতাল বড়ো কষ্ট দিচ্ছে
আমার কাছে লুকিয়ে আছে তোমার জন্যে ভালবাসা ||
পাখি আমার একলা পাখি
হলুদ পর্দা ছিঁড়ে ফেলতে এক মুহূর্ত সময় লাগবে –
তার পরে লুট—প্রভুর পায়ের কাছেই কি বাতাসা পড়ছে ?
মালসা-ভোগের সময় মানায় অন্ধ হাতে ধুলোর মুঠি ?
জিভ হলুদ বাসনার কাঠি, তাতেই খাঁচা তৈরি হতো –
পাখি আমার একলা পাখি, একলা-ফেকলা দু-জন পাখি |
স্বাদু ফলের চতুর্দিকে জালের তৈরি শক্ত বেড়ায়
বাদুড় তুমি একলা পড়ো, আমি দাঁতেই কাটছি সুতো
ঢুকবো সমুদ্দুর-লেগুনে –নীল জলে লুটোচ্ছে মোহ
আধভেজা ফুল-শায়ার মতন, সেই শায়াতে জড়িয়ে আছে
জল, জেলি, লোভ, রক্ত আমার—
পাখি আমার একলা পাখি, একলা-ফেকলা দু-জন পাখি |
বাবার হাতে তৈরি আমি, এক মুহূর্তে ভাঙবো পিঠের
উল্টে-রাখা সাধের সিন্দুক—মোহর মেজেয় পড়বে ঝরে
নীল জলে লাল পাথরকুচি আষ্টেপৃষ্ঠে আলিবাবার
আমি একটি সোনার মাছি মাড়িয়ে ফেলবো রাতদুপুরে
স্বাদু ফলের চতুর্দিকে জালের তৈরি শক্ত বেড়ায়
বাদুড় তুমি একলা পড়ো — আমি সিন্দুকে সাঁতার কাটছি |
পাখি আমার একলা পাখি, একলা-ফেকলা দু-জন পাখি
লাগছে ভালো—সারাজীবন খাঁচার মধ্যে, বাসনা-কাঠি
ঘিরে রেখেছে ন্যাংটো শরীর—এদেশে কাপাস ফলে না
খাদ্য-জলের নেই ব্যবসায়, তাই থুতু-পেচ্ছাপর ভক্ত
সব শরীরটা ঠুকরে খেয়েও দু-জোড়া ঠোঁট বাঁচিয়ে রাখা
নোংড়া পাখি, নোংরা পাখি—নোংরা-ঠোংরা দু-জন পাখি |
নিয়তি
বাগানে অদ্ভুত গন্ধ, এসো ফিরি আমরা দু-জনে |
হাতের শৃঙ্খল ভাঙো, পায়ে প’ড়ে কাঁপুক ভ্রমর
যা-কিছু ধুলার ভার, মানসিক ভাষায় পুরানো
তারে রেখে ফিরে যাই দু-জন দু-পথে, মনে-মনে |
বয়স অনেক হলো নিরবধি তোমার দুয়ার—
অনুকূল চন্দ্রালোক স্বপ্নে-স্বপ্নে নিয়ে গেলো কোথা |
নাতি-উষ্ণ কামনার রশ্মি তব লাক্ষারসে আর
ভরো না, কুড়াও হাতে সামুদ্রিক আঁচলের সীমা |
সে-বেলা গেলেই ভালো যা ভোলাবে গাঢ় এলোচুলে
রূপসী মুখের ভাঁজে হায় নীল প্রবাসী কৌতুক ;
বিরতির হে মালঞ্চ, আপতিক সুখের নিরালা
বিষাদেরে কেন ঢাকো প্রয়াসে সুগন্ধি বনফুলে |
তারে দাও কোলে করি অনভিজ্ঞ প্রাসাদ আমার
বালকের মৃতদেহ, নিষ্পলক ব্যাধি, ভীত প্রেম |
তুমি ফেরো প্রাকৃতিক, আমি বসি কৃত্রিম জীবনে
শিল্পের প্রস্রাবরসে পাকে গণ্ড, পাকে গুহ্যদেশ |
ধীরে ধীরে
ধীরে ধীরে
যেভাবেই হোক
বদলে নেবো
বদলে বদলে নেবো |
মানুষ মানুষে গাছে গাছ
সিংদরজা আনাচ-কানাচ
বদলে নেবো
বদলে বদলে নেবো
ধীরে ধীরে
যেভাবেই হোক
বদলে নেবো
ছেঁড়াখোঁড়া ইজেরের ফুটো
কনুই পর্যন্ত ভাঙা মুঠো
বদলে নেবো
সহজ পোশাকে
আকর্ণবিস্তৃত মুখ ঢাকে
ঠায়সন্ধ্যা পিছল গলির
চলি
চলি, দেখে আসি
বেজেছে আঘাট–ছাড়া বাঁশি
কিনা
কোন রাজ্যে রয়েছে নবীনা
বিপ্লব
যেভাবে হোক
বদলে নেবো
বদলে বদলে নেবো |
যেতে পারি, কিন্তু কেন যাব
ভাবছি, ঘুরে দাঁড়ানোই ভাল
এত কালো মেখেছি দু হাতে
এত কাল ধরে।
কখনো তোমার করে, তোমাকে ভাবিনি।
এখন খাদের পাশে রাত্তিরে দাঁড়ালে
চাঁদ্ ডাকে আয়, আয়, আয়।
এখন গঙ্গার তীরে ঘুমন্ত দাঁড়ালে
চিতা কাঠ ডাকে আয়, আয়, আয়।
যেতে পারি,
যেকোনো দিকেই আমি চলে যেতে পারি
কিন্তু, কেন যাবো?
সন্তানের মুখ ধরে একটি চুমো খাবো
যাবো
কিন্তু, এখনি যাবো না
তোমাদেরও সঙ্গে নিয়ে যাবো
একাকী যাবো না অসময়ে।
আনন্দ-ভৈরবী
আজ সেই ঘরে এলায়ে পড়েছে ছবি
এমন ছিলো না আষাঢ়-শেষের বেলা
উদ্যানে ছিলো বরষা-পীরিত ফুল
আনন্দ-ভৈরবী
আজ সেই গোঠে আসে না রাখাল ছেলে
কাঁদে না মোহনবাঁশিতে বটের মূল
এখনো বরষা কোদালে মেঘের ফাঁকে
বিদ্যুৎ-রেখা মেলে
সে কি জানিত না এমনি দুঃসময়
লাফ মেরে ধরে মোরগের লাল ঝুঁটি
সে কি জানিত না হৃদয়ের অপচয়
কৃপণের বামমুঠি
সে কি জানিত না যত বড়ো রাজধানী
তত বিখ্যাত নয় এ-হৃদয়পুর
সে কি জানিত না আমি তারে যত জানি
আনন্দ সমুদ্দুর
আজ সেই ঘরে এলায়ে পড়েছে ছবি
অমন ছিলো না আষাঢ়-শেষের বেলা
উদ্যানে ছিল বরষা-পীড়িত ফুল
আনন্দ-ভৈরবী |
চাবি
আমার কাছে এখনো পড়ে আছে
তোমার প্রিয় হারিয়ে যাওয়া চাবি
কেমন করে তোরংগ আজ খোলো?
থুতনিপরে তিল তো তোমার আছে
এখন? ও মন নতুন দেশে যাবি?
চিঠি তোমায় হঠাত্ লিখতে হলো ।
চাবি তোমার পরম যত্নে কাছে
রেখেছিলাম, আজই সময় হলো –
লিখিও, উহা ফিরত্ চাহো কিনা?
অবান্তর স্মৃতির ভিতর আছে
তোমার মুখ অশ্রু-ঝলোমলো
লিখিও, উহা ফিরত্ চাহো কি না?
যে যায় সে দীর্ঘ যায়
দিগন্তের দিকে মুখ, পিছনে প্রসিদ্ধ বটচ্ছায়া
কে জানে কোথায় যাবে— কোথা থেকে এসেছে দৈবাৎ-ই
এসেছে বলেই গেলো, না এলে যেতো না দূরে আজ।
সমস্ত মানুষ, শুধু আসে বলে, যেতে চায় ফিরে।
মানুষের মধ্যে আলো, মানুষেরই ভূমধ্য তিমিরে
লুকোতে চেয়েছে বলে আরো দীপ্যমান হয়ে ওঠে —
আশা দেয়, ভাষা দেয়, অধিকন্তু, স্বপ্ন দেয় ঘোর।
যে যায় সে দীর্ঘ যায়, থাকা মানে সীমাবদ্ধ থাকা।
একটা উদাত্ত মাঠে, শিকড়ে কি বসেছে মানুষ-ই?
তখন নিশ্চিতই একা, তার থাকা—তার বর্তমানে,
স্বপ্নহীন, ঘুমহীন— ধূলা ধূম তাকে নাহি টানে।
একজন দীর্ঘলোক সামনে থেকে চলে গেলো দূরে —
এভাবেই যেতে হয়, যেতে পারে মানুষ, মহিষ!
0 মন্তব্যসমূহ