জুলাই-এর একগুচ্ছ কবিতা ।। ইমাম উদ্দিন


 


১. হে স্বাধীনতা! তুমি আমারে শক্তি দাও

*

আমি দ্রোহের আগুনে প্রতিনিয়ত জ্বলছি 

হানাদারের আঘাতে আমার ভাইয়ের 

মৃত্যুর করুণ দৃশ্যে আমি

নিজেকে থামাতে পারিনি একটুও

শোকের আগুনে দাউদাউ করে জ্বলছে হৃদয়

বুক ফেটে চোখের কোণে নেমে আসে জল 

স্বৈরাচারী'র বর্বরতায় ভেঙে ফেলি আমার আবদ্ধ 

কারাগারের সমস্ত অনিয়ম। 

বুকের সবটুকু সাহস নিয়ে বলে ওঠি—

মুক্তি চাই! মুক্তি চাই! আমার ভাইয়ের মুক্তি চাই! 


হে স্বাধীনতা! তুমি আমাকে শিখিয়েছ জালিমের 

কাছে মাথানতহীন থাকার। 

শহস্র বুলেট-বোমার আঘাতে যেন বন্ধ না করি—

আমার ন্যায্য অধিকারের প্রতিবাদ! 


হে স্বাধীনতা! তুমি আমারে শক্তি দাও—

এমন স্বাধীনতা আমি আর ফিরে পেতে চাই না। 

বায়ান্নের রফিক-জব্বার, সালাম-বরকতের

মতন শক্তি আর 

অদম্য সাহস দাও তুমি, আমাকে।

যে সাহস আমাদের দিয়েছিল, বাঙলা ভাষা আর

সুজলা-সুফলা একটি সুন্দর দেশ।


২. ফিরে এসো, কবিতা

*

বিদ্রোহের অনলে পুড়ে গেছে 

স্বৈরাচারীর 

মসনদ আর অনিয়মের খুঁটি

নমরুদ-ফেরাউনের মতন একেএকে 

ধ্বসে গেছে 

জালিমশাহীর নলকূপগুলো


অফিস থেকে রাস্তাঘাট 

কোথাও আজ 

জুলুমের ব্যারিকেড নেই। 


সুখের সমস্ত আয়োজন নিয়ে তাই

এবার তুমি—

ফিরে এসো, কবিতা।



৩. আমাকে ক্ষমা করো

*
আমাকে ক্ষমা করো, কবিতা। 
মহান স্বাধীনতার এই যুদ্ধে আমার তেমন 
কোন সক্রিয় ভূমিকা ছিল না। 
অন্যায়ের প্রতিবাদে প্রতিবেশি যেভাবে আওয়াজ তুলল
তার সেকিভাগও আমি
জনতার আন্দোলনে কণ্ঠ তুলতে পারিনি। 

স্বৈরাচারের ভয়ানক ভিত আমাকে রোজ
তাড়িয়ে তাড়িয়ে খেয়েছে! 
স্বাধীনতার মহান এই যাত্রাকালে আমার 
ভাইয়ের করুণ মৃত্যু দেখে
ঘুমাতে পারিনি যাপিত দিনের রাতগুলো

আমি তবুও কিছু বলতে পারিনি
আমি তবুও কিছু করতে পারিনি
ফ্যাসিজমের বীভৎস অনিয়ম আমার মুখে শেকল
পড়িয়ে দিলো দীর্ঘ পনেরটি বছর। 

আমাকে ক্ষমা করো, কবিতা। 
জীবনের এই পথযাত্রায় আমি এক অসহায় 
ভীতস্ত্র পথচারী। 
আমার ভাইয়ের মৃত্যু দেখেও 
তুলতে পারিনি আমি একটু প্রতিবাদী আওয়াজ 



৪.তুমি প্রস্তুত থেইকো

*
এই শহরে তোমার এখনও ফেরার সময় 
হয়ে ওঠেনি, কবিতা। 
তুমি প্রস্তুত থেইকো; জনতার সাথে 
হাতে হাত বেঁধে ফ্যাসিস্ট শাসককে তাড়াতে 
পারলেও রয়ে গেছে তার 
দীর্ঘ পনেরটি বছরের জন্ম নেয়া স্বৈরতন্ত্রের
ধুসর কণাগুলো

পৃথিবীর মানচিত্রের ক্ষুদ্র এ' দেশে
আমি এখনও স্বাধীন হয়ে ওঠতে পারিনি পুরো

কবিতা! যেদিন এইসব ফ্যাসিজমের ছাইপাঁশ
তাড়াতে পারব, সেদিন
ঠিক সেদিনই তোমার সাথে উড়াব
বাঙলার আকাশে লাল সবুজের স্বাধীন পতাকা—

তুমি প্রস্তুত থেইকো, কবিতা।



৫.ফ্যাসিস্ট সময়কার

*
রূপের আগুনে জ্বলমল করছে প্রেম
তবুও সাড়া দেয়নি, কবিতা। 
অতটুকু বলে যায় কেবল— 
ফ্যাসিস্ট সময়কার সবটুকু আজ
ফ্যাসিস্ট হয়ে গেছে। 
কোন সময়ে এসে কখন ছেড়ে 
চলে যাবে প্রেম—
তার কোন ইয়ত্তা নেই, জীবনে



৬.আমি মানুষ ছিলাম

*
বিশ্বাস করো- মা! আমি মানুষ ছিলাম; 
দু'বেলা ভাতের দরুন 
স্বৈরশাসন আমাকে বন্য বানিয়ে ফেলেছে। 
তাই আহার না জুটা অবধি এখন আমি আর 
ঘরে ফিরতে পারছি না। 

মা! বলে রাখি শুধু এইই—
যদি কখনো ফিরে আসে তোমার ছেলে! 
মনে কইরো
হয় শহীদের কাফনের কাপড়ে নয়তো স্বৈরতন্ত্র 
দাফনের খাটিয়া নিয়ে এসেছি। 

বিশ্বাস করো- মা! আমি মানুষ ছিলাম;
দু'বেলা ভাতের দরুন 
স্বৈরশাসন আমাকে বন্য বানিয়ে ফেলেছে। 


৭.মৃত্যু ছাড়া

*
গোলাপকে ভালোবাসতে গিয়ে
কাঁটার আঘাতে ঝরা প্রতিটি রক্তের ফোটা
বারংবার বলে ওঠে—
মৃত্যু ছাড়া কোন আঘাতেই প্রেমিককে 
থামানো যায় না

একবার আঘাত পেলে 
পরে—
প্রেমিকরা বহু বহুগুণে জেগে ওঠে



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ