অনুপ আর্থারের তিনটি কবিতা

 





১।

দুঃখিত বন্ধু; আজ আর কোনো সুসংবাদ নেই, কিঞ্চিৎ 

স্বান্তনা আছে শুধু -

সাতচল্লিশ হাজার বর্গমাইল জুড়ে পড়ে আছে কেবলই শুশ্রূষাহীন শুন্যতা

এক-একটা গ্রামের পর গ্রাম যেন বৃক্ষশূন্য বহুকাল -  

বিপন্ন প্রায় অরণ্যকে সগৌরবে বাঁচিয়ে রাখার মতো

এমন দুরদর্শিতা কই!

যদি পারো ওদেরকে একটু জল দাও, দু’টুকরো রুটি, আর দাও অকৃপণ মমতা।


সুদৃশ্য বলতে যা কিছু বোঝো! সুকঠোর আঘাতে তাকে কতটুকু ফুটিয়ে তুলতে পারো -

দূর্লভ তোমাদের মমতা, ঠিক অই শ্বেত পাথরে ঘেরা সুনির্মম বেধির মতো

এ-সব  মুদ্রিত অন্বেষণ, একদিন ক্রমাগত জনহীন হয়ে পড়বে সবকয়টি প্রার্থনাগার,

অরণ্যের বুনো ময়ূর হয়ে উঠবে আরো নিঃসঙ্গ, ভুলে যাবে তার সমস্ত নৃত্যশৈলী, বনপথ - 

এমন অনিবার্য বিপর্যয়ের দায় নিবে কে! মানুষ, সভ্যতা নাকি অই বিজন বৃক্ষ। 


যেকোনো মিথ্যাকেই সমীচীন লাগে, যেহেতু দুনিয়ার সমস্ত সত্যই দুর্বোধ্য এবং হতাশার -

সন্তর্পণে যেদিকে যাই, দেখি ক্রমাগত ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে শতাব্দীর আয়ুষ্কাল

হায় পিতামহ! বলো কোথায় দাঁড়াবো আজ, এই সংহার সর্বস্ব চরাচরে! 

শতবর্ষ নিদ্রাহীন এই অভাবের অভয়ারণ্যে, অই শাশ্বত  ঈশ্বরও সুখের ক্রীতদাস। 


২৫ মার্চ "২৪




২।

আশ্চর্য আলোয় মেলে ধরি শীর্ণ, নগ্ন পাঁজর, ভাঙা  চতুষ্কোণ - শিয়রে মগ্নতা -

আধোলীন পৃথিবী জেগে আছে স্বলাজে, সুবিন্যস্ত সাজানো অদ্ভুত বেদনার সেতার

দেখো আনত-মুখ বৃক্ষের মতো দাঁড়িয়েছি একা, ঢের মমতা না হোক

কিঞ্চিৎ করুণা করো বন্ধু, তুমি তো জানোই -

যেকোনো মগ্ন কামনা দিতে পারে কেবল দুরারোগ্য ব্যাধির যন্ত্রণা।


জন্মাবধি এমন কোনো প্রার্থনা শিখিনি, যা নিজেই মুছে দিতে পারে নিজের অভাববোধ -

নেহাৎ জন্মেছি বলেই নিশ্চিত প্রস্থানে এতো ভয়, না হলে কবেই ভেঙে ফেলতাম এই দৈন্যতার দেয়াল,

শৈশবের বৃদ্ধ পুরোহিতের কথা মনে পড়ে খুব, সমর্পণের পর যে ম্লান মুখে শেষবার ফিরেছিলো ঘরে, 

পুঁথি- ভর্তি মঙ্গল বার্তা নিয়ে সে আর এই পথে আসেনি কোনোদিন;

কোনো মাঙ্গলিক প্রনয় মনে রাখেনি তারে, এই সুনির্মম অমঙ্গলের গৃহে। 


শুনেছি অই নগরীতে তোমারা সম্মিলিত প্রেম দিয়ে একটা দীর্ঘ প্রার্থনালয় গড়ে তুলেছো - অথচ আজ -

সমস্বরে কেউ হৃদয়ের কথা বললে, আমি শুনি অতিদূর  শ্বাপদসংকুল কোনো অরণ্যের হা-হুতাশ -

অভয় দাও আমি মাতৃহারা অসহায় মৃগয়ার মতো ক্রমাগত অসুখী হয়ে উঠবো; তবুও-

যা কিছু শান্তির, যা কিছু মঙ্গলময় তার কাছে সবিনয়ে বসে থাকার মতো দারিদ্র্যতা আমার নেই!!




৩।

একটি পথের মতো নির্বিকার হয়ে আছি; ফুরিয়ে যাচ্ছে সংযম এবং যাবতীয় সহিষ্ণুতা -
রেস্তোরাঁর ক্ষীণ আলোর সরু পথ চলে গেছে সমুদ্রঘেঁষা পাহাড়ের দিকে
আফিমের বাগান থেকে ভেসে আসে শতাব্দীর শরীরের আদিম ঘ্রাণ,
যেখানে সলজ্জ অভিশাপ নিয়ে মাতাল হয়ে আছে ঈশ্বর যীশুর খুনিরা;
এমন বিদ্রুপ ছড়ানো সন্ধ্যায় বুনো শুকরের দগ্ধ শরীর ডুবে যাচ্ছে লাল মদের গ্লাসে।

এতো সংকীর্ণ হয়ে আছি - যেন
আমাকে সহজে পার হয়ে যেতে পারে - মানুষ কিংবা একটি আধেক মৃত পাখিও -
বিলুপ্ত প্রায় আদিবাসী নদীর মতো সংকুচিত হয়ে আসে চোখ এবং বিবিধ ঘটনাবলী;
পৃথিবী যেন হাজার বছর একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের হৃদয় বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে।

সবিনয়ে সেলাই করে চলেছি রক্ত, মাংস আর পাঁজরের
দীর্ঘ হাড়, তবুও ক্রমশ পৃথক হয়ে যাচ্ছে সম্ভাব্য প্রণয়-
মাটির জানালা থেকে খসে খসে পড়ে ফুল ও কীটের গচ্ছিত ডানা - তবুও 
আমি সেই সম্মোহনের কাছে যেতে চাই, যে অলস ঘুঙুর বেজে ওঠে ইশারায়,
তেত্রিশ'শ বছর ধরে এক নিগুঢ় অন্ধকার ভেঙে ভেঙে প্রকাশ্যে এনেছে যে আলো;
আমি তার প্রতিবিম্বিত ছায়ায় দেখি, যুদ্ধ ও শান্তির সম্মিলিত প্রলোভন।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ