তানভীর কবির সালমানের একগুচ্ছ কবিতা


 

১।


নাদান শিশুটির দিকে তাকাও। আব্বার চোখ রাঙানো ফসকে—

মার্বেল হাতে বেরিয়ে গ্যালো যে এক্ষুণি 

গামলায় ঘুরপাক খাওয়া সেই মাছটার কথা। ঝড়া ফুল জলে ক্যামন বারবার খাবি দিচ্ছে

ধরো টিনের চালে জোড়া পায়রা দুটো, সফেদ পেখম গুটিয়ে একপায়ে ভর দিয়ে রোদ পোহায়

কিংবা ভুট্টার ক্ষেত ঝাপটে উড়ে গেল যে টিয়া। তারমতো করে চেয়েছিলাম ডানা—

রাখালের সুরের জীবন 

অবাধ ফসলের মাঠ ডিঙ্গানো। সুরের বাশি

গামছায় কোমরে বেধে

বকরি দড়ি হাকানো। সন্ধ্যার কাছে ফেরা

কিংবা নির্জন ঘর

শূন্যতার অন্ধকারে নিজেকে তালাশ। বিড়ি হাতে জানালার উঁকি 

নো ল্যান্ড এগ্রিমেন্ট ফর মাদারল্যান্ড 

চোদানো রাজনৈতিক কথা ভুলে হাটুজল নদীর কাছে। মৎস্য শিকারে


আমি কবিতা কেন লিখবো

প্রশংসীত মুখের দিকে চেয়ে ক্যানো তলিয়ে যাব ব্যাদনার জরায়ুতে। 

গিলে ফেলা চিৎকারে; কি সেই ডেমোক্রেসির লালায়িত জনম—




২।

তুমি  বোঝো—

                     শেষমেষ  আমি

            তোমার  কাছেই  যাই;

                  য্যামন  নাফরমান

 পাপবোধ  নিয়া  ফিরা  আসে

        খোদার  করুণার  দিকে!




৩।
সারসের ডাক কতদুর গ্যালো— ধুলো উড়া হাওয়ায় য্যামন ঝরে মুকুল
গমের মাঠে মাঠে ঢেউ। লেবুর ফুল ভাসে খুশবুতে, পাখি ডানা ঝাপটাইলো কয়েকবার।
একটা বুনো বিড়াল আইল পাড় হয়ে সোজাসুজি চলে গ্যালো পশ্চিমে,
তুমি বকরি চড়াইতে পারো। ঝুম কইরা বৃষ্টি যদি নামে— খুটি তুলে দড়ি হাকাও
কাপড় তুলে নাও শূন্য আড়ে। চালুনের আচার 
নেমে আসবে কি উঠানে, পথে
তোমার চিবুকের জল
এত আদর আদর— বলো আমি কি তালাশ করবো আর সুখের
পথে কোন সাইরেন নাই। গাড়ি নাই
এরকম লাজ করিও তুমি ঘোমটার আজানে
বসিও মাদুরে কাঁথার সেলাইয়ে
আমরও তো হৃদয়ে চির। সেলাও নিখুঁত হাত তোমার 
আকুল অন্তর কলের জলে
জলধারা বয়ে যায়, ভেসে যায়
য্যানো তোমাকে না পাওয়ার কথা কেবল তোমাকেই বলি— সিপারার সুরে সুরে ;




৪।
একটা বৈকাল নষ্ট ডিমের মতো লালচে আভা নিয়ে আসো মহানন্দায়—
আমাকে ভাসাও,
ভেলায় তোড় দুধের ভাসা সরের মতো।
বুনোহাঁস নেমে যাও জলে— ঢেউয়ে আর 
আলোর সঙ্গমের খেলায় মত্ত হয়ে দেখো জলের কীর্তন। 
আমার প্রাণ কাঁটায় ফুটছে দারুণ 
এফোঁড়- ওফোঁড় 
সুই এ 
বেলুন চুপসে যায় লজ্জাবতী যুবতীর চেহারার মতোন। হৃদয়ের ব্যাথা শোন,
আঙুলে তৃষ্ণায় শিশির শুকিয়ে যাওয়ার আগে, ভাসা ভাসা কুয়াশায় 
শরীর নাও আমার। নাক ঘেঁষে— 
উপুড় হয়ে শুয়ে থাকবো ঘাসের মাঝে। নড়েচড়ে কেচোর মতো, আরও গভীরে। 
আমি মরে যাচ্ছি, দূরে আলো পড়েছে 
ততটুকু আহ্লাদী মায়ের চুড়ি ফেরি করিয়েছে যারা।
বেনীর লাল ফিতে, সূচালো কাঠি
তাদের হৃদয় দেশলাইকাঠিতে জ্বলেছে দুপুরে ক্ষুধায়। 
জোৎস্নায় মাঘে চুরুটের গন্ধে, লেপ্টে গিয়েছি আব্বার চাদরের ভিতর। আর আমার ঘুম 
কে জাগায়াছো মোরে—
হিংসায় মরে যাচ্ছো যে দুঃখ। তোমাকে দিলাম বন্ধা নারীর বুনির কসম
তুমি ফিরে যাও। আর আমার ঘুম  
মায়ের উদরের কাছাকাছি নিতে পারবে কিনা। আমি তো আহত শিশু 
জ্বরের তেতোয় গলা শুকিয়ে যাচ্ছে বারবার। আমার লালিত আত্মা, আমাকে মৃত্যু থেকে ফেরাও
জল দাও মুখে—


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ