যেমন খুশি তেমন কাঁদো
আমাকে সাজসাজ প্রস্তুতিতে রেখেই
সুখের দিনগুলি চলে যায় বিদ্যুৎচমকের মতো
আর দুঃখের দিন?
দুঃখের দিনগুলি যেন পড়ে আছে কচ্ছপের দু'খানি পা।
মগজে অন্ধত্বের চাষবাস— সুখের নেশায় বুঁধ হয়ে দৃশ্যমান বিষকেও
ঔষধ মনে করে গদ গদ করে গিলে খাচ্ছি সংকুলে।
পৃথিবীর প্রতি মানুষের মায়া বাড়ছে দিনকে দিন
চারিদিকে এতো এতো উৎসব; হিন্দোল-হংসধ্বনি
তবুও কোথাও না কোথাও শিশুকান্নার ভায়োলিনে সুরছেঁড়া করুন সুরে
ঝরাপাতার আর্তনাদে চিপকে কান্না করছে পৃথিবীর দিক-বেদিক।
যেমন খুশি তেমন কাঁদো—
যেহেতু তোমার কান্নার ধোঁয়াতলে কেউ করবে না সমবেদনার পানাহার।
ভাঙারাতের সপ্তকে হৃদয়ে বাঁধে বেদনার দানা
ফুটপাতের নীল মাছিরা ঠাট্টা-তামাশা করে মানুষের পল্টিবাজি দেখে,
না! তোমার কোনো হীনমন্যতা থাকার দরকার নেই
যেহেতু তুমি রোদরঞ্জন জিরাফ
সুখেই থাকো সমকালীন সুখের নির্ঝরে।
[ ১২ চৈত্র ১৪২৮ বঙ্গাব্দ ]
চিরায়ত প্রেম
কোথাও কোনো ছুটি নেই
নিরব স্লোগানে আকাশ ধ্বনিত করছে আত্মার কঙ্কাল
একটা মুখ এমন ভাবে গেঁথে আছে বুকে
যেমন ভাবে গেঁথে থাকে কাগজে কালো অক্ষর।
একমুঠো রোদ গাঙচিলের ডানায় ছিলো
একগুচ্ছ সুখ ছিল আম বাগানে ঝুলে থাকা মৌমাছির মৌচাকে;
আজ তা কেবলই স্মৃতির ধূসর ক্যানভাস।
লাল বেনারসি কিংবা মেহেদি রাঙা হাত দেখে
কখনো উঠেনি বেজে আমার হৃদয়ের সাইরেন,
আমি হাতের ছুঁয়াতে খোঁজে পেয়েছি দৌড়ে আসা লাস্ট ট্রেন ধরার তৃপ্তি
চোখের চাহনিতে দেখেছি লোক লোকান্তর শ্রদ্ধার টেলিকাস্ট।
বেশি ভালোবাসলে দূরত্বের কুন্ডলী পাকিয়ে শহর ছেয়ে যায় বিষন্নতায়
ভালোবাসা নিংড়ে পড়ে মহাসমুদ্রে সাবমেরিন হয়ে
তখন প্রেয় হয় আফসোস-অসন্তুষ্টি আর বিশ্বাস ভাঙ্গা বুনোহাস:
আবার কি তোমার দেখা পাবে আমার দু'চোখের রেটিনা?
তুমুল ঝরে রাস্তা ভুলে দেখা কি হবে না আর ঘুর্নায়মান বসুধার মোড়ে?
না না মানসী, বিচ্ছেদের গন্ধ ধুনো দিক স্মৃতিঘরে
যদি বিরহের সাথে আপোশ হয়ে যায়
তবে প্রেমিকরা বিপ্লবে নেমে পড়বে...
গভীর রাতে লেম্পোষ্টের নিচে স্টেশনে স্টেশনে
দেখা যাবে না মাটি কুড়ে খাওয়া পাগল
সভ্যতা বোঝবে না—প্রেম-অপ্রেম ভাঙ্গা-গড়ার শিল্প ধ্বংসের যবনিকা।
[ ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ইং ]
একদিন কিছুই দেখবনা
একদিন কিছুই দেখবনা
চিরচেনা এই শ্যামল দৃশ্যাবলি
জীবিকা নির্বাহে ছুটে চলা অসংখ্য বেকারের কষ্ট
পছন্দের গোধুলীময় শেষ বিকেল
প্রিয় ঋতু শীতকাল;
সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা ফুলবল খেলোয়াড় ইমনের মুখ
একদিন কিছুই আমি দেখবনা।
একটা রেইনট্রি গাছ আমার খুব বন্ধু
তার কাছে গিয়ে বসি মন খারাপের সময়টাতে,
তাকেও আর দেখবনা
জীবনের অসংখ্য অপূর্ণতাকে কোলে করে
নিশ্চুপ আকর্ষণ হয়ে চলে যাবো আপন বাড়িতে।
একদিন কিছুই দেখবনা বলে-
আজ একটু দেখে এলাম গ্রামের গোরস্তান
রাত্রি শেষের আহ্বান, সৃষ্টিকর্তার ডাক
খোলে দেখলাম পৃথিবী পরিচালনার শ্রেষ্ঠ সংবিধান;
প্রিয়জনদের প্রিয় চেহারা।
দৃষ্টিহীন এই নির্জীব আমি থাকবনা বলে
পৃথিবীর কেউ বলবেনা আমিও থাকব না!
শুধু কান্না করবে— আর মুখে বলবে
এই তো নিয়ম পৃথিবীতে চিরদিন কেউ বেঁচে থাকেনা।
0 মন্তব্যসমূহ