১.
জায়নামাজ
বেদনার এক বনসাই স্থির চেয়ে আছে
জীবনের দিকে
জীবন স্বল্পদৈর্ঘ্য আয়ুরেখা
থেমে যেতে বলে আলোপথ পিছু নেয়
নুয়ে পড়া সূর্যের দিকে
অনুরাগ গোপন স্বরে ডাকে
কারা সাড়া দেয় জানে না অপার হাওয়া
ঘ্রাণহীন পাতারা দুলছে মৃদু
মুমূর্ষু ছায়া এসে দাঁড়ায় শিয়রে
জীবনকে ডেকে বলি-
শিকড়ের নির্যাস আমাদের আয়ুর পরিধি বাড়াবে
মাজারের বেড়ায় তবু একটা লালসুতা বেঁধে এসে জায়নামাজে হাত তুলি
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
২.
চারুলতা
সে ঘুমালে শিয়রের অন্ধকারে
একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখি।
ঘুমন্ত হাসিটার ছায়া
বিস্তীর্ণ হয় ঘরের দেয়ালজুড়ে।
আমি সে ছায়ার দিকে মনযোগী হই।
দেখি, দুটি নরম ডানার প্রজাপতি হয়ে
সে আমার চোখের পাপড়িতে বসে পড়ে।
একটা সুদূর ঘুম পেরিয়ে চারুলতা হেঁটে গেলে যে হৃৎপিন্ডে বিভ্রম ধুকপুক করে-
নৈঃশব্দ্য আলো পদ্মপাতার জলে সে কম্পনের ভাষা রচনায় ব্যস্ত হয়।
ভেজা বাতাসের ঘ্রাণের বার্তা নিয়ে হারিয়ে যায় হরকরার সাইকেল।
মরীচিকার মতন অদৃশ্য পথে সংশয় নিয়ে পড়ে থাকে একটা সোনার হৃদয়।
০১ নভেম্বর ২০২৪
৩.
এক প্রাচীন ভ্রূণের গর্জন
কাকভোর হবার আগে মধ্যরাতকে পাহারা দিয়েছে সভ্যতার নিভুনক্ষত্র।
বিশ্রামঘর একটা আলোর কুন্ডলীকে কোলবালিশ বানিয়ে শুয়ে থাক।
প্রকৃতির ক্যালকুলাস মেপে সন্ধিগানে ডেকে তুলি রোদ-প্রেমিকার ইশারা প্রয়াস।
পৃথিবীর কক্ষপথ ভুলে একখন্ড উল্কা এসে এঁকে দেয় তরুনীর ওড়নানকশা।
সংগমবিরতিকালে জানালার শিক গ'লে সব ধোয়া ঐতিহাসিক আয়নায় প্রতিবিম্ব হয়ে রয়।
গার্হস্থ্য অন্ধকারে কুমারী হাওয়া
একা বয়ে যায়।
গর্ভের প্রাচীন ভ্রূণের উদ্ধত গর্জন
কে পেরেছে সামাল দিতে?
শিহরণ জমা রেখে সান্ধ্য প্রলাপ নিয়ে একা ফিরে যায় রাজপ্রাসাদের সমূহসর্বনাশ।
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
৪.
জীবনের কাছে আয়ুহীন বেঁচে থাকা
প্রাত্যহিক দিনের অবশেষে
শরীর নামিয়ে রাখি খোলা উঠোনের একটিমাত্র বিছানায়
উপরে তাকালে বিষন্ন আকাশ
তাকেই বলে রাখি -
খুব ভোরে ডেকে দিও।
রাত আমাকে দেখেনা
আমিও
ঘুমচোখে দেখিনা রাতের উলঙ্গ বাতাস
জেগে থাকা পেঁচার ঠোঁটে লেগে থাকে অভাবের তীক্ষ্ণতা
সে খুঁজুক অলস ঘুমুতে যাওয়া
মাটিগন্ধী কেঁচোর আখড়া।
ক্লান্ত আমি স্বেচ্ছায় মিস করি
একা এক চাঁদ-
রাতের পুকুরে নেমে
নিজেকে ভেঙে কীভাবে
সাঁতারের পাঠ নেয়।
আসন্ন সকালের নিষ্পাপ শিশির
সূর্যের প্রথম আলোর কাছে
অবলীলা আত্মসমর্পণের আনন্দ নিয়ে
মরে যাবার দৃশ্য দেখব বলে
এবেলা ঘুমিয়ে পড়ি
জীবনের কাছে আয়ুহীন
বেঁচে থাকা আমি।
২৫ জুন ২০২৪
৫.
চোখ, সেতো এক বিষাক্ত ধোঁকা
অচেতন পড়ে আছে একটা তরুণ হৃৎপিন্ড।
চুমুর বদলে ধারালো বিষদাঁত বসিয়ে যে সাপ একটা চিরকালীন অন্ধকার গর্তে পালিয়েছে
পরিবেশ বিদ্যার নামে সে সাপকে ধরা যায় না।
ক্ষয়প্রাপ্ত বাতাসের করুণায় চুপচাপ কিছু প্রশ্বাস দুই অলিন্দ সচল রাখে।
হলুদ পাপড়ি ছেড়ে
শেষবারের সুর্যাস্ত দেখতে আসা
অন্য হৃদয় রক্তাভ আকাশে পড়তে থাকে-
চোখ, সেতো এক বিষাক্ত ধোঁকা!
১৭ অক্টোবর ২০২৪
0 মন্তব্যসমূহ