তুষার মাহমুদের কয়েকটি কবিতা

 




ধুলোঝড় পশ্চিমে যাও সাহারায়


বিপরীতমুখী বাসস্টপে ধুলোবালি উড়ছে,শাড়ির ফাঁকে জড়িয়ে আছে দৃষ্টি।

পারফিউম উৎপাদন করে যায় হাওয়ার গতিবিধি — প্রসাধনী আয়না নিজেকে দেখার চোখ কোথায়?

কোথায় সে বিহ্বলা নদী,তিন তালাক কেড়ে নিয়েছে যার দুলিয়ে উঠা ক্রুদ্ধ আনাগোনা।

আমি সে কখন থেকে কুকুর হয়ে আছি,দৌড়পথে পোড়া মরিচের গুঁড়ো, ঝাপসা হয়ে আসে ঘ্রাণ।

অদৃশ্য আঙুলের প্রতারণা খোঁজে ম্যানহোল ; যদিও নিসঃঙ্গ — সমাধির কাছাকাছি সাদা সুতির শাড়ি।

কে শুয়ে আছে এমন বিকলাঙ্গ অপয়া! 


সমুদ্রে তীরবর্তী শুঁটকির দড়িতে ঝুলে থেকো না সন্ধ্যা — বাষ্প সনাক্তে অক্ষম যে বৃদ্ধ তার 

প্রবোধের প্রয়োজন নেই —  কিভাবে নোনাজলে গড়িয়ে যায় জীবন।

তোমাদের পৃথিবীতে এত এত আত্নহনন,আমার কিছুই করার থাকে না, বসে থাকা ছাড়া।

বারোয়ারী লজ,লাশঘর — সুহৃদ পরম্পরায় সবাই মেনে নিচ্ছে গন্তব্য।

অদৃশ্য আঙুলের প্রতারণায় আমি ছুঁয়ে দেবো কার মুখ?  ধুলোঝড় পশ্চিমে যাও, সাহারায়।




ধূসর 


আমস্টারডামের নিশ্চেতন সকাল গুলো,ইহুদিদের তীব্র ব্যঞ্জনা  নিয়ে আসে।

প্রতিটি দেওয়ালে একই চিত্রকর্ম!

যেনো রাস্তাপারাপারে থেমে গেছে সময়।

বুনো কমলার স্বাধ নিতে,জঙ্গলে ঘুরছে উঠতি বয়সী নগ্ন পা — তার আগ্রহের চেয়েও ধূর্ত,আমার মেপে

নেওয়ার পরিধি।অথচ পাশেই নৌকাডুবি, মাছেদের সাঁতার — মানুষ সে তো চিরকাল ডুবে মরছে 

নিজের ভেতর!

যাদের সিলিং এ আধকাঁচা কাপড় ঝুলছে — উদ্দেশ্যহীন যাত্রায়; অনুগ্রাহী তুমি দাঁড়িও না সম্মুখে।

ফিতের অন্যপ্রান্তে যে রাস্তা সেখানে ঘুমিয়ে পড়ো,জ্যোৎস্না পৃথিবীতে নিয়ে আসে আরো নিগুঢ় রহস্য।

তুমিতো নিরবিচ্ছিন্ন কোন সমুদ্র নও,তবুও বর্ষণশীল সন্ধ্যায় নক্ষত্রের এলোমেলো ছোটাছুটি — 

বিনিময়ে গ্রামোফোনে নিকট ভবিষ্যত।

জানি! পৃথিবীতে নানান রঙের মৃত্যু আছে আর আমি ভালোবাসলাম — জারুলের অন্ধকারে,

এপিটাফের কালো ছায়া।




অধ্যাপিকা 


যে বিকেল ঘুমিয়ে আছে কাঁথার নিচে

শরীরের সবুজ ক্লান্তি নিয়ে।

সেখান থেকেই মূলত পথের শুরু —  রিংটোনে পরিচিত গান।

আর সে পূর্বচেনা অধ্যাপিকা, যার কাজলের আঁধার পৃথিবীকে দিয়েছিলো উদাস অনুভব।

কিংবা মফস্বলের সে বালক যার প্যাডেলে থমকে আছে সন্ধ্যার নাশতা ;


অকস্মাৎ দেখি,ক্যামিকেল গোডাউন থেকে একে একে বের হচ্ছে গোলাপের পাপড়ি। 

দিবসের গায়ে সানাইয়ের সুর — যা কিছু ভুলে যাওয়া যেতো পবিত্র সম্বোধনে,

আজ তার সবকিছুই রেললাইনের মতো দীর্ঘ স্বচ্ছ!


যেনো সফেদ শাড়ীর আঁচলে লেগে আছে মৈথুনের শীতল হাওয়া ;


তবুও বিধবা জীবনের অভিশাপ নিয়ে যে পথ চলে গেছে রেলওয়ে কলোনির দিকে,

সেখানে আজ আমার মৃত আকাঙ্খা পুনর্জন্মের রঙিন প্রজাপতি —

দেখি নব্য বাসরে হাতছানি দিচ্ছে  সাঁঝবাতির আকর্ষণ ;




যাত্রাপথে 


আপনাদের বলছি হে শত্রু স্বজন

আমার কল্পিত আয়ু ফুরিয়ে গিয়েছে

এখন রাতভর শিয়ালের চিৎকার আর বন্দনায় — নৃত্য করে সম্ভাব্য সুসময়। 

দ্রব্য জাতীয় কিছু নিয়ে আসুন,

দেখে যান ;  কৈ মাছের ছটফটানি রপ্ত করতে গিয়ে শূন্য হয়ে গেছে এক কবি।

আসুন হে শত্রু স্বজন — তাকে দিয়ে যান বেদনা বহির্ভূত কিছু গালি আর মিথ্যা আশ্বাস।

যাত্রাপথে যাকিছু ঘটেছে তাকে বলুন, বলুন সে নারীর কথা,যার গ্রীবায় ছেয়ে গেছে আমাবস্যা, 

রোমান হরফের নীল অন্ধকার।

কিংবা সে তিলের কথা, যেখানে  মৃত সনেট অনন্ত মুক্তির পথে ধাবমান!

আপনারা আসুন সম-দূরত্বের এই পথ অতিক্রম করে ;

বাদ মাগরিব উড়ে চলে যাবে আকাঙ্খার সমস্ত আলিঙ্গন—আসুন শত্রু স্বজন, 

বিসর্জন দেখে যাবেন একদিন!





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ