তাহমীদ চৌধুরীর কয়েকটি কবিতা







আমারে ধরো আমি দূর্বল
হাতে পায়ে ধরা নয় 
এই ধরা তুমি বোঝো। 
বোঝার মতো ভারী, হৃদয়; 
দেখো সেও এক গ্রাম
গ্রাম মানেই কি পাখি? 
তেমন জরুরী নয় কিন্তু; তবু
কান পাতা যেতে পারে ভিতরে
এমনকি বাহিরে বোতাম খোলা 
অথবা পুরাতন সেলাইয়ের ফোকর 
ভরাট রেখেও দেখা যেতে পারে
কোথাও কাকলী লুকিয়ে আছে কিনা।
দেখতে চোখ দরকার, আদতে দরকার কি!
এতোবার লিখি, আঁকি, দাগাই, জাগাই 
মনে মনে; মনে হয় ভালোবাসি বলা হলো না
হয়ে গেলে বিপদ কিনা কেজানে 
যারা জানে খুঁজলে নিশ্চয়ই জানা যেতো।
আবার খোঁজ, চিরকাল এই স্বতঃস্ফূর্ত উপাসনা
উপলব্ধির পর ক্লান্ত লাগে, তীব্র আহত
আমারে ধরো, হাতে পায়ে ধরা নয়
হৃদয়, পাখি-পাথর সবকিছু ছাড়িয়ে 
দেখো সে এক প্রবল গ্রাম, শীত কাতর, নরম।

১৬ নভেম্বর/২৪



~



অনেকগুলো জীবন আপাদমস্তক বদলে গেল 
ধড়াধড় বন্ধ হয়ে গেল কয়েকটি জানালা
একটি রাস্তা ভেঙে ফেলা হলে বহু রাস্তা 
তৈরি হলো তারই নবীন দর্পণ রুপে, দেখলাম। 
বহু মানুষের নিয়মিত জড় হওয়া দেখলাম,
সস্তা স্বার্থে মানুষের শূন্যতা দেখলাম এখানেই;
উড়ে যাওয়া পাখি এবং ভেঙে যাওয়া পাখা 
দুটোই দেখলাম শিশুদের নিরীহ খেলার বিরতিতে।
প্রজ্ঞার বৃক্ষ কেটে বানানো ফাঁসির মঞ্চ দেখলাম,
দেখলাম অনায়াসে আদর্শের কঙ্কালের উপর গড়ে উঠছে ভোগের অট্টালিকা; 
সভ্যতার মোড়কে আদিম উল্লাস 
কেমন জেগে ওঠে বারেবার, দেখলাম। বিবেকের ফিসফিস উস্কানি ডুবে যাচ্ছে  
বাজারের তুমুল কোলাহলে। 
দেখলাম, প্রার্থনার হাতও ভাগ মেপে নিচ্ছে কৌশলী দক্ষতায় আর আলোকিত 
মঞ্চের নিচে কিলবিল করছে অসংখ্য অন্ধকার কীট। সেই মানুষ, মানুষের খুলি দিয়ে 
তৈরি হচ্ছে ক্ষমতার নতুন পিচ্ছিল সিঁড়ি...
সে যা হয় হোক কিন্তু এইখানে একটা জীবন্ত জুলাই মরে গেল
এইখানে একটা জ্বলন্ত জুলাই নিভে গেল
এইখানে এত রক্তের বৃথা স্রোত মিশে গেল বঙ্গোপসাগরে
বলো, এই দৃশ্য কীভাবে দেখি নিজের চোখে, কেমনে অন্ধ হই?

২১ এপ্রিল/২৫



~



লোকসংখ্যার ছায়া ডুবে যাচ্ছে আঁধারে 
প্রাত্যহিক নিয়মে
একা বেড়ে ওঠা নিমগাছ চিবোচ্ছে বাতাস 
রাজপথের মধ্যখানে; 
আপন খেয়ালে হাঁটার অভিনয় করছে 
মাদকচক্রের নবীন সভ্য।
আমার কোথাও যাওয়ার কথা নয় 
আসার কথাও নয় কারও এই বরাবর
মনোযোগ নেই স্পষ্ট কিছুতে
উচ্ছ্বাসের কারণ নেই 
নেই মসজিদের মাইকে কোনো 
প্রতিধ্বনিত শোক সংবাদও।
তবু মন খারাপ হলো
সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে 
সে মন ঘুরে আসছে সিলিং থেকে
ঢাকা শহরের অগণিত খোলা ছাদ, 
ইস্পাতের অজগর অর্থাৎ রেলগাড়ি
পেরিয়ে জননীর মুখের আকস্মিক ঝাপটায়
খুলে যায় পরিচিত ঘরের ময়লা দরজা, তখনও
লোকসংখ্যার ছায়া ডুবে যাচ্ছে আঁধারে 
প্রাত্যহিক নিয়মে
একা বেড়ে ওঠা নিমগাছ চিবোচ্ছে বাতাস 
রাজপথের মধ্যখানে;
দুটো বিড়ি ফুঁকে ঘুমিয়ে পড়ছে সে
কবিতায় নিজেকে লেখার কথা ছিল যার।

২৩ এপ্রিল/২৫


 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ