'জুলাই ২০২৪' ডায়েরি ও ইতিহাস : তুষার মাহমুদের কবিতা


 

আমরা যারা ঘরে ফিরতে চেয়েছিলাম  

বিপ্লবীদেরও ছিলো চোখের পাতায় ভূখণ্ডের মানচিত্র

স্বৈরাচারী আয়োজিত সভা সেমিনারে ঘৃণার একদলা তাজা থুতু —আর শুকিয়ে যাওয়া রক্তের পাশে

তর্জনীর একক অধিপত্য।

লোহিত ধারায় মাছির ভনভন

তারা তোমাকে ভালোবাসে হে পিশাচ

তুমি যাদের দিয়েছো অপব্যবহার

কংকালের উপর দাঁড়িয়ে শ্রুতিমধুর ভাষণে তাদের আঙুলের ভেতর জেগে ওঠে পরাশক্তি

আমাদের বুকের ছেঁড়া বোতাম

ছেঁড়া শার্ট

হাঁটুর কাছে জ্বলে উঠে প্রজন্মের লালিত স্বপ্ন ____

আমরা তো পরাজিত নই

লংমার্চ 

ঐতিহাসিক সব বিশ্বাসঘাতকতার পাশে

যুগে যুগে লাঞ্চিত আমাদের রেখা 

তবুও কিসের আশায় আমাদের প্রবাহিত রক্তের কালো স্রোতে

ভেসে যায় 

তোমাদের বন্ধনীর সমস্ত তীর্যক আলো?

ব্যারিকেট

আর

বুক পেতে রাখা প্রেমিকের কিসের এত দায় ছিলো?  তোমার উলঙ্গ  নাভিমূলে ছুঁড়ে দিবে হতাশার শেষ দৃষ্টি! 

রাইফেলের সাথে তোমার যে গভীর প্রেম রাষ্ট্র।

তার ব্যর্থতা নিয়ে বিলম্বিত বুলেট,

ছিন্নভিন্ন করছে তোমারই সন্তানের আয়ু —

এত নির্বাক তুমি 

এত নির্লিপ্ত

তবু আমাদের চোখ রাঙানি — তর্জনীর ভাঙা নখ

দেখাবে সন্দেহের শেষ নেই।

ছাঁইয়ের ভস্ম থেকেই

জন্ম যে প্রসিদ্ধ সংগ্রামের

তার

ব্যানারের স্বরবর্ণ মুছে দিতে পারবো না 

বৃষ্টির মাস ____

আমাদের রক্তের দাম নেই

নেই দেখেই সর্বসাধারণ অবগত নয়

কাল ছত্রভঙ্গের মিছিলে

বুলেটবর্ষনের আওয়াজ গিলে নিয়েছে যে ফেনিল সমুদ্র 

তার ভ্রুর ইশারা 

দমিয়ে রাখতে পারেনি সংযম। 

হে রাস্ট্র 

হে ফ্যাসিস্ট

কতকাল আর মুখ লুকিয়ে রাখবে মউতের আড়ালে? 

হে জাতীয় বাঞ্চোত — তোমাদের মায়ের আঁচল কতকাল সহনীয় থাকবে আর?


আমরা যারা ঘরে ফিরতে চেয়েছিলাম 

তারা যদি ঘরে না ফিরি

তোমরা কোথায় পালাবে? কোথায়? 

কোন গণভবন তোমাদের দিবে।



ফ্যাসিস্ট রাইফেল 


নির্জনে আজ সব পুড়ে গেছে সুবোধ 
ওরা
স্কুলে পড়তো
নামতা শিখতে শিখতে বুঝে গেলো 
এ স্বাধীন রাষ্ট্র একটা অন্ধকার খাঁচা 
আর
ভবিষ্যৎ যেনো সোনার হারানো আংটি 
যখন তারা সে হারানো আংটি খুঁজতে গেলো
বৈষম্যের সম্মুখে 
টিয়ারশেল — শ্বাসরুদ্ধের পরিকল্পনা 
লোহিত ধারায় বয়ে যায় চোরাপুঞ্জি 
অথচ ওরা বিশ্বাস করতো 
নানামুখী বিতর্ক আয়োজন ;

বলো সুবোধ 
বলো
এ লজ্জা আমি কোথায় লুকাবো?

ওরা স্কুলে পড়তো 
আজ ওদের ইউনিফর্ম দেখলে মনে হয় রেড সী্ 
ফেনীল ঢেউয়ের আত্মকথন। 
মৌখিক পরীক্ষায় যারা আজীবন বলে এসেছে 
“ আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি ”

দেখো সুবোধ 
আজ নির্বাচিত বুলেট তাদেরই বুক ছিড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে 
আমার অর্জিত বাংলায় 

ফুল ও কফিন সমাচারে —
হায় ফ্যাসিস্ট রাইফেল 
তুমি তো অন্তত দেখাতে পারতে নির্মোহ
ওরা আমার ভাই
যাদের কপালে এখনো
মায়ের চুমুর কাঁচা ঘ্রাণ 
দুধের গ্লাসে 
সর প্রতিবাদে যে মা এখনো জমিয়ে রেখেছে অভিমান ;

দেখো
দেখো সুবোধ 
আজ তাদেরই সাদা ইউনিফর্মে
ছোপ ছোপ বাঙলাদেশ
অথচ ওরা বলতো
“ আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি ”
হিমশীতল তন্দ্রা যাদের দেখতে দেয়নি বৈশ্বিক বিপ্লবের শেষ সবুজ
তর্কে হয়তো 
কোন না কোনদিন তারা আবারও বলে উঠবে
হে ফ্যাসিস্ট রাইফেল আমরা তোমাকে ভালোবাসি। 




সম্মিলিত সম্মোহন 

আর নয়তো ভেঙে ফেলো
ট্রিগার চেপে আছে যে আঙুল,তার সমস্ত অহমিকা।
আমাদের ত্যাগ নিশ্চয়ই কোন রাঙতা ভোর নিবে না,
এখানে রৌদ্রতাপে,যে সকল গাছের ডালে ফাঁস হয়ে থাকে ছিটকে পড়া রক্তের হাস্যজ্জ্বল পরিনতি। 
সে সকল গাছের গোড়ায় পুঁতে দাও,সভ্যতার শেষ মাইন;
ঘৃণা, থুতু,আর সে সমস্ত গালি, যা আমাদের প্রেমিকাদের বোধগম্য হয়নি কোনদিন।
তবুও তারা যেমন খিলখিলিয়ে হেসে উঠতো অনার্য ভঙ্গিমার পূর্ণ বিশ্বাসে,
আজ সে সমস্ত বিশ্বাসের পাশে আসো তর্ক নিয়ে দাঁড়াই। 
আমরা তো জেনে গেছি —
পিস্তলের ক্লীবে চূর্ণবিচূর্ণ সমস্ত মৌন অভিমান
তবে আজ আর কিসের ভয়?
কাঁটাতারে আবদ্ধ থেকে,
ডানাবিহীন উড়ার সময় ফুরিয়ে গেছে। 
আসো মিছিলে গুলিবর্ষণের মুখে চুমু খাই,
সম্মিলিত সামরিক বুটের ভিতর রেখে আসি তারই শোষিত  নিমগ্ন নিদর্শন। 
আর সেসব গালি, যা আমাদের প্রেমিকাদের বোধগম্য হয়নি কখনো
ফ্যাসিস্ট শক্তিের বিরুদ্ধে চোখ রাঙাবে বলে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ