পুলসিরাত
সারারাত ঘুম হয়নি যে ধূপকাঠির সুগন্ধে
মাঝ দুপুরে এসে তা নিভিয়ে রেখেছি,
পুরোনো ডাকবাক্সের মত তবুও নস্টালজিক লাগে।
তুমি জানো না,
এই জীবন পার করছি পুলসিরাতের মত,
বারবার উসকে উঠা ক্ষতের সাথে- যতটুকু সমঝোতা রাখা গেলে এই পুলসিরাত পার হওয়া যায় তা কল্পনাতীত।
চামড়ার নিচে কিলবিল করে উঠে নীল জোছনার মত শিরা,
আর কেবল তাড়না দেয়,
অন্তত একবার তারা আরেকটা হরিজন্টাল লাইনের তিব্র টানে বেজে উঠতে চায়।
তবুও কোথায় যেনো তার বাজার ক্ষমতা নাই।
আর কত ভোরে উঠে লবণ-লবণ লাগলে ট্যাপ থেকে শুরু করে গ্লাসে ভর্তি পানি,
ছোটবেলার চল্লিশ ডাকাতের গল্পের মত খুলে যাবে মুক্তির পথ?
কার কাছে রাখা সেই পথ খোলার মন্ত্র?
আমি শপথ করি আমি যদি সন্ধান পেতাম মাবুদ,
আমার সমস্ত প্রার্থনা শেষে সেই হতো আমার মোনাজাতের উপসংহার।
অবকাশের প্রলাপ
শীতকালীন ধূসর আকাশে আমি লাল ঘুড়ি উড়াই,প্রশ্ন হইলো-
শীতকালীন বাতাসে ঘুড়ি উড়ানো যায় কিনা! জোর কেমন!
এমন নানা অবান্তর প্রশ্ন ঘুরপাক খায় মাথার দেয়ালে দেয়ালে,
রাত করে বাড়ি ফিরার পথে গলির মুখে এক বিস্কুট বাগানের মালিককে দেখি এখনো খদ্দেরের অপেক্ষায়,
সময় বহমান, এবং লোকেদের নানা রকম প্রত্যাশা!
পলিটিক্যাল আড্ডার রেশ কাটতে না কাটতে ঢুকে পড়ি সাংসারিক হিসাব নিকাশের চার দেয়ালে।
আইসক্রিমের বক্সে বন্দি ওয়াশিং পাউডার,
তাতে আবার দেয়া একটা প্লাস্টিকের লাল চামুচ,
আবার কখনো, সাইজে ছোট মশলার চামুচ
ব্যবহারের অসুবিধায় ছুড়ে ফেলে দিচ্ছি রান্না ঘরের জানালা দিয়ে।
এসবও কাউকে মুগ্ধ করে,
অবাক হই,
হই দুর্বল,
চৈত্রের দুপুরে ভেজা গামছা পেতে শুই ফ্লোরে,
ভাত ঘুম শেষে কাঁদি।
কিছুটা তাপসহনীয় হলেই অম্নি এক নাক বন্ধ হয়ে যায় ঠাণ্ডা লেগে,
তবুও হাঁচি-কাশি-জ্বর-মাছির ভনভন, কিছুই আর টলাতে পারে না দীর্ঘদিন হলো;
কত করে চাচ্ছি একটু কঠিন অসুখী
“এই শহরের ঘর গুলো সব,
দেখে মনে হয় কত কাছে
অথচ ভেতরে বাদাম বাদাম দূরত্ব!”
এইসব জানার পরও!
এত কঠিন তো হতে চাইনি কোনো দিন,
এককোণে পড়ে থেকে হয়েছি পাথর,
এখন বুকে জড়ালে-
মাথা নোয়ালে আর কেউ
এবং সন্ধ্যা বেলার ধূপ-ধুনো কিছুতেই আর ভেতরে দেবী জাগে না।
এপ্রিল ১৪,২০২৫
বেদে জীবন
আমার উচিত ঘুমিয়ে পড়া,
আরো বেশি করে ঘুমে থাকা
জাগলেই কেবল দুঃস্বপ্ন দেখে আঁতকে উঠি।
মদের নেশা কাটতে না কাটতেই
সামনে দেখি দখিনা বাতাসে দুলতে থাকা
ধুতরার নাচ,
গোলাপী কিংবা হাল্কা গোলাপী;
কাদা-পোড়া মবিলের ঘ্রাণ জ্বলে জ্বলে নাকে লাগে তিব্র রোদে।
আমার উচিত আরো বেশি করে ঘুমিয়ে থাকা,
ঘুম ভাংলেই কেবল দেখি-
ভাত শালিকের বৈদ্যুতিক পিলারের উপর বানানো ঘরে বনিবনা হচ্ছে না,
কিচিরমিচিরে এই আধা মফস্বল সরব।
মদের নেশা কাটতে না কাটতে দেখি-
টাইপরাইটার বিলুপ্ত,
তবুও একজন তুলির মালিক কোত্থেকে একটা জোগাড় করেছে,
ভালোবাসার নানা লাইন সে লিখে পাঠায়;
আমার ভালো লাগে না,বিরহ জাগে।
আমার আরো আরো বেশি ঘুমিয়ে থাকা উচিত,
ঘুম ভাংলেই দেখি,
ভোর হয়নি
নৌকার দুলনি যেনো
পেণ্ডুলামের দোল।
থামার নাম গন্ধ নেই,
অথচ বেদে জীবন ফুরোচ্ছে না;
ফুরাবে ভাবলেই হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে।
তাই আমার উচিৎ আরো বেশি করে ঘুমিয়ে থাকা…
0 মন্তব্যসমূহ